
উত্তর ২৪ পরগনা, ডানলপ : দুর্গাপূজার প্রাক্কালে দাবা প্রতিযোগিতা ২০২৫ আয়োজন ।
উৎসবের মরশুম মানেই আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর একত্রিত হওয়ার সুযোগ। দুর্গাপূজার আগে সেই উচ্ছ্বাসকে আরও রঙিন করে তুলতে উত্তর ২৪ পরগনার ডানলপের যমুনা ভবনে আয়োজিত হলো এক অভিনব দাবা প্রতিযোগিতা। “As Chess Academiy ও Bandel Chess Academy”–এর উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতা কেবল খেলার আসরই নয়, বরং মানসিক বিকাশ ও প্রাচীন ভারতীয় ক্রীড়াসংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার এক বিশেষ প্রয়াস।

প্রতিযোগিতার সূচনা হয় রবিবার সকালে, জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। স্থানীয় বিশিষ্টজন, দাবা প্রশিক্ষক এবং খেলোয়াড়দের উপস্থিতিতে যমুনা ভবন মুখরিত হয়ে ওঠে দাবার রাজ্যে। দাবা, যা ভারতের অন্যতম প্রাচীন খেলা হিসেবে পরিচিত, সেই খেলার ইতিহাসকে নতুন করে তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে। দাবা শুধু একটি খেলা নয়, বরং মেধা, ধৈর্য, কৌশল ও মনোযোগের এক অনন্য প্রতিফলন – এই বার্তা পৌঁছে যায় দর্শক থেকে প্রতিযোগী সকলের কাছে।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেন প্রায় ৪০০-র অধিক খেলোয়াড়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো বয়সের কোনো বাধা ছিল না এই আসরে। ৮ বছরের ক্ষুদে প্রতিযোগী থেকে শুরু করে ৮০ বছর বয়সি প্রবীণ দাবাড়ু—সকলেই সমান উৎসাহে অংশগ্রহণ করেন এই প্রতিযোগিতায়। একদিকে যেমন ক্ষুদে প্রতিযোগীদের চোখেমুখে ফুটে ওঠে প্রথমবার বড় মঞ্চে খেলার উত্তেজনা, তেমনই প্রবীণদের মধ্যে ছিল দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর এক অনন্য আনন্দ।

যদিও প্রতিযোগিতাটি ছিল উৎসব উপলক্ষে, তবুও ম্যাচগুলিতে দেখা যায় আন্তর্জাতিক মানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। খেলোয়াড়রা বোর্ডের সামনে বসেই ডুবে যান কৌশলের জগতে। দর্শকদের মধ্যেও উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। প্রতিটি চাল যেন এক নতুন রহস্য তৈরি করে দিচ্ছিল। উপস্থিত দাবা প্রশিক্ষকরা ক্ষুদে প্রতিযোগীদের খেলার কৌশল বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন এবং অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন প্রতিটি খেলোয়াড়কে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা বলেন, এধরনের আয়োজন শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে দাবার ঐতিহ্যকে পৌঁছে দেওয়ার একটি অনন্য প্রয়াস। দুর্গাপূজার আগে এই দাবার আসর মননশীলতার এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে।

আয়োজকদের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকারীকে দেওয়া হবে বিশেষ পুরস্কার—একটি টুপি ও নগদ ১০ হাজার টাকা। এছাড়া অংশগ্রহণকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে স্মারক এবং প্রশংসাপত্র, যাতে তাদের উৎসাহ বাড়ে। আয়োজকদের বক্তব্য, “আমরা চাই আগামী দিনে আরও বেশি মানুষ দাবা খেলায় অংশগ্রহণ করুক। দাবা শুধু খেলার আনন্দই দেয় না, বরং শিশু ও তরুণ প্রজন্মের চিন্তাশক্তি, মনোযোগ এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ায়।”

প্রতিযোগিতার সমাপ্তি হয় বিকেলের দিকে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও দাবা প্রশিক্ষকরা। উপস্থিত দর্শকরা করতালির মাধ্যমে অভিনন্দিত করেন বিজয়ীদের।
এই দাবা প্রতিযোগিতা প্রমাণ করে দিল, উৎসব শুধু প্যান্ডেল বা প্রতিমা কেন্দ্রিক নয়, বরং মননশীলতা ও সংস্কৃতিরও মিলনস্থল। দুর্গাপূজার আনন্দের প্রাক্কালে এমন এক ব্যতিক্রমী আয়োজন উত্তর ২৪ পরগনা তথা সমগ্র জেলার সাংস্কৃতিক দিককে সমৃদ্ধ করল।















