
মহম্মদ সফিউল আলমের রিপোর্ট, রাজনগর, বীরভূম: বীরভূম জেলার রাজনগর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শংকরপুর ডিহি গ্রামে বসবাস করেন একই পরিবারের তিন প্রতিবন্ধী ভাইবোন— সুন্দরী মুর্মু (৪৮), সিংহ মুর্মু (৪৩) ও দারোগা মুর্মু (৪১)। শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ অক্ষম হওয়ায় তাদের জীবিকা নির্বাহের পথ দীর্ঘদিন ধরেই ছিল কষ্টকর ও অনিশ্চিত।
২০১৯ সালে সুন্দরী মুর্মু ডিআরসিএসসি সংস্থা পরিচালিত স্বনির্ভর দলে যুক্ত হন। সে সময় তাদের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল মদ বিক্রি, যা গ্রামবাসীদের জন্য নেশা ও সামাজিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। স্বনির্ভর দলের সদস্য ও সংস্থার কর্মীদের উদ্যোগে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও শেষমেশ তাদের পরিবারকে ওই ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়।
ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় কঠিন সংগ্রাম। পরিবারের একমাত্র আয় এখন লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প থেকে মাসে ১০০০ টাকা এবং রেশন বাবদ চাল-আটা। চিকিৎসা, পোশাক, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী মিলিয়ে সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে দরিদ্র গ্রামবাসী ও সংস্থার সদস্যরা পাশে দাঁড়ান। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে ৫৪০০ টাকা সংগ্রহ করে তাদের প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট করানো হয়। অবশেষে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে তারা তিনজনই প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট পান এবং এপ্রিল মাসে মানবিক ভাতার জন্য রাজনগর ব্লকে আবেদন করেন।
তবে ভাতা চালু না হওয়ায় খাদ্য সংকট আরও বাড়তে থাকে। অবশেষে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে এলাকার ছয়টি গ্রামের প্রায় ১৭০ জন মানুষ একত্রিত হয়ে সাহায্যের হাত বাড়ান। তারা প্রায় ১৮০ কেজি চাল, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও নগদ অর্থ তিন ভাইবোনের হাতে তুলে দেন।
এখন গ্রামের মানুষের একটাই দাবি—
“মানবিক ভাতা দ্রুত চালু করা হোক, তাহলেই এই তিন অসহায় ভাইবোনের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।”














