
শিলিগুড়ি: সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে শহরের চেহারা, বদলেছে ব্যবসার ধরনও। আধুনিক সাজ, ঝাঁ চকচকে কেক শপ, অনলাইন অর্ডারের ভিড় সব কিছুর মাঝেও আজও নিজের জনপ্রিয়তা অটুট রেখে চলেছে শিলিগুড়ির ঐতিহ্যবাহী ‘রাধা বেকারি’। প্রায় ৫০ বছর আগে বাবা বাসুদেব পাল যে ছোট্ট বেকারির স্বপ্ন দেখেছিলেন, আজ তা সযত্নে আগলে রেখে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর ছেলে সঞ্জীত পাল।
সঞ্জীত পালের কথায়, “আমাদের দোকান প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুরনো। এখন আশেপাশে অনেক আধুনিক বেকারি গড়ে উঠেছে, কিন্তু তাতেও রাধা বেকারির জনপ্রিয়তায় কোনও ভাটা পড়েনি।” বিশেষ করে ২৫ ডিসেম্বর থেকে পহেলা জানুয়ারি ক্রিসমাস ও ইংরেজি নতুন বছরের সময় শিলিগুড়ির কেকের দোকানগুলিতে যে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়, রাধা বেকারিতেও তার ব্যতিক্রম হয় না। শুধু উৎসবের মরসুমই নয়, সারা বছর ধরেই এখানে ক্রেতাদের আনাগোনা লেগে থাকে।
সঞ্জীত বাবু জানান, “আমরা চেষ্টা করি মানুষকে ভালো জিনিস উপহার দিতে। শুধু ব্যবসার জন্য নয়, মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই কাজ করি।” তাঁর দোকানে সারা বছর কেবল কেক নয়, বিভিন্ন ধরনের বেকারি সামগ্রী পাওয়া যায়। উৎসব অনুযায়ী নানা ধরনের কেকও তিনি দোকানে নিয়ে আসেন, যাতে সব বয়সের মানুষ নিজের পছন্দ মতো কিছু না কিছু খুঁজে পান।
রাধা বেকারিতে ঢুকলেই চোখে পড়ে বিস্কুটের বিশাল সম্ভার যাকে সঞ্জীত পাল মজা করে বলেন “বিস্কুটের পাহাড়”। নানা রকম স্বাদ ও আকারের বিস্কুট সাজানো থাকে তাক জুড়ে। সঞ্জীত বাবু নিজেই জানান, “এই দোকান থেকেই আমি আমার সংসার চালাই। তবে আমার একটা শখ আছে বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট দোকানে নিয়ে আসা। মানুষ আসে, পছন্দ করে, কিনে নিয়ে যায়। সবাই যখন আমার দোকান থেকে বিস্কুট নিয়ে যায়, তখন সত্যিই ভালো লাগে।”
বাবা বাসুদেব পাল কয়েক বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর চলে যাওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব এবং দোকানের পুরো চাপ একাই কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে সঞ্জীত পালকে। তিনি বলেন, “বাবা চলে যাওয়ার পর সব দায়িত্ব আমার ওপর এসে পড়ে। কিন্তু আমি আমার দোকানকে ভালোবাসি। এই দোকানই আমার পরিচয়, আমার স্বপ্ন।”
বিশ্বাস আর পরিশ্রমই সঞ্জীত পালের মূল শক্তি। তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “ভগবানের আশীর্বাদ আছে আমার কাছে, আর বাবার আশীর্বাদও সবসময় সঙ্গে আছে। তাই আমি বিশ্বাস করি, আমার স্বপ্নের রাধা বেকারিকে আমি আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।”
শিলিগুড়ির বুকে দাঁড়িয়ে রাধা বেকারি আজ শুধু একটি দোকান নয়, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলা এক নিষ্ঠা, ভালোবাসা আর বিশ্বাসের গল্প।


















