
‘মহালয়া’, এই শব্দের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ভোরবেলা রেডিওর ‘মহিষাসুরমর্দিনী’, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের অমর কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ, আর দেবীপক্ষ আগমনের আবহ। কিন্তু শাস্ত্র মতে মহালয়ার অর্থ আসলে কী? হিন্দুশাস্ত্র স্পষ্ট বলছে, মহালয়া হল পিতৃপক্ষের অবসান আর দেবীপক্ষের সূচনা। এই তিথিতে মূল রীতি তর্পণ পিতৃপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য জল-পিণ্ড প্রদান। বিশ্বাস, এইদিন প্রয়াত পূর্বপুরুষেরা পরিবার থেকে এই নিবেদন গ্রহণ করেন। তাই প্রকৃত অর্থে মহালয়া হল স্মরণ আর পারলৌকিক ক্রিয়াকর্মের দিন।

তাহলে প্রশ্ন ওঠে যেদিন মূলত শ্রাদ্ধ ও তর্পণ হয়, সেই দিনকে ‘শুভ’ বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত? মহালয়া যে দুর্গাপুজোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়, সেটিও শাস্ত্রপ্রমাণিত। কৃষ্ণপক্ষের নবমী থেকে দেবীর বোধন শুরু হয়ে যায়, যাকে বলে নবম্যাদি কল্পারম্ভ। মল্লরাজাদের প্রাচীন দুর্গাপুজোও শুরু হয় এই তিথিতে। অর্থাৎ, মহালয়ার দিন দেবী দুর্গার পূজা শাস্ত্রীয়ভাবে আরম্ভ হয় না।
তাহলে কীভাবে মহালয়া দেবীপক্ষের প্রতীক হয়ে উঠল? উত্তর পাওয়া যায় লোকাচারে। প্রতিমার চোখ আঁকা, কুমোরপাড়া থেকে প্রতিমা রওনা হওয়া, মণ্ডপ প্রস্তুতি সবকিছুতেই মহালয়া তিথি বেছে নেওয়া হয়েছে। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বাণীকুমার ও পঙ্কজ মল্লিকের কালজয়ী ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। ভোররাতের এই সম্প্রচার তিথিটিকে সাধারণ মানুষের মনে পৌরাণিক গুরুত্ব দিয়েছে।

আজ তাই বাঙালির কাছে মহালয়া মানেই মা আসছেন, কিন্তু শাস্ত্র মতে এটিকে শুভ বলা বিতর্কিত। তাই মহালয়া আসলেই শুভ না শুধু একটি আবেগ তা হবে আপনার সিদ্ধান্ত।















