
নিজস্ব প্রতিবেদন: বীরভূমের তকিপুরে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে জাঁকজমক সহকারে বড় মা কালীর বিসর্জন অনুষ্ঠিত হল শনিবার। সকাল থেকেই তকিপুর গ্রামের অলিগলি মাতোয়ারা উৎসবের আবহে। বিসর্জন উপলক্ষে ভিড় জমায় লক্ষাধিক ভক্ত। পরিস্থিতি সামাল দিতে ছিল কড়া পুলিশি নজরদারি। পাশাপাশি ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের কিউ.আর.টি দলও উপস্থিত ছিল গোটা অনুষ্ঠানজুড়ে।
বোলপুর রুটে বনপাস স্টেশনে নেমে দু’আড়াই কিলোমিটার পথ পেরোলেই ছোট্ট গ্রাম তকিপুর। এখানেই পূজিত হন এলাকার ‘বড় মা কালী’। ছয়দিন ধরে চলে এই পুজোর উদ্যাপন। শনিবার সকাল ৮টা নাগাদ মন্দির চত্বরে পূজা-আর্চা সেরে বের করা হয় বড় মা কালীর প্রতিমা। দড়ি টেনে কয়েক শো মানুষ ধাপে ধাপে নিয়ে যান প্রতিমাকে বিসর্জন ঘাটের উদ্দেশে। ঘাটে রীতি মেনেই বিসর্জনের পর প্রতিমার কাঠামো ফিরিয়ে আনা হয় মন্দিরে।
প্রতি বছরই এই বিসর্জন ঘিরে উৎসুক হয়ে থাকেন তকিপুর ও আশপাশের গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দা। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই পুজো শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার নয়, বরং ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা।
ইতিহাস বলছে, রাজা বিজয়চাঁদ মহতাব এই পুজোর সূচনা করেন বহু বছর আগে। জানা যায়, যেখানে পূজার স্থান, সেখানে আগে ছিল মহাশ্মশান। ডাকাতদের পূজিত হত দেবী। দীর্ঘদিন অবহেলিত অবস্থায় থাকার পর তৎকালীন রাজা স্বপ্নাদেশ পান এবং নতুন করে দেবীর আরাধনা শুরু করেন বিশাল আয়োজনের মধ্য দিয়ে। শতাধিক হাতি, ঘোড়া, ঢাকি নিয়ে সেই সময় পুজো করা হত। এরপর থেকেই বড় মা কালীর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে দূরদূরান্তে।
বর্তমানে সেবাইত হিসেবে স্থানীয় সরকার বাড়ির সদস্যদের হাতে পুজোর দায়িত্বভার। তাঁদের দাবি, প্রায় ৫০০ বছরের ঐতিহ্য তাঁরা আজও সমান নিষ্ঠায় বহন করে চলেছেন। আজও রয়েছে বেগার প্রথা। মাত্র এক টাকার বিনিময়ে শতাধিক কর্মী মিলেমিশে গড়ে তোলেন দেবীর প্রতিমা। অতীতে নরবলির প্রথা থাকলেও এখন তা আর প্রচলিত নয়। যদিও পশু বলি আজও রয়ে গেছে এই পুজোর অংশ হিসেবে।
প্রাচীনতা, লোকবিশ্বাস ও ঐতিহ্যের অনন্য সমন্বয়ে গড়ে ওঠা তকিপুরের বড় মা কালীর বিসর্জন আজও বীরভূমের অন্যতম আকর্ষণ। সমাজের নানা স্তরের মানুষের অকুণ্ঠ অংশগ্রহণে প্রতিবছর নব নব আবেগে ভরে ওঠে এই উৎসব।














