
জীবনবিমা ও স্বাস্থ্যবিমায় সম্পূর্ণভাবে জিএসটি মকুব করবে বলে ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বুধবার জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকের পর তিনি জানান, চলতি বছরের আগামী ২২ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ নবরাত্রির দিন থেকেই কার্যকর হবে জি এস টি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি মোদী সরকার পণ্য ও পরিষেবা করের কাঠামোয় নিয়ে এল বড়সড় সংস্কার। এতদিন পর্যন্ত দেশে জিএসটির মোট পাঁচটি হারই কার্যকর ছিল। তবে এবার থেকে সেই কাঠামোয় নতুন অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। নতুন কর ব্যবস্থায় জিএসটি হার এখনও কার্যকর হবে দুটি ৫ এবং ১৮ শতাংশ। মাত্র কয়েকটি ক্ষেত্রে রাখা হয়েছে ৪০ শতাংশ শুল্ক, যেগুলি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারাম্যান পাপের সামগ্রী বলে উল্লেখ করেছেন।
৪০ শতাংশ করের আওতায় আনা হয়েছে বিলাসবহুল গাড়ি, তামাকজাত দ্রব্য, নরম পানীয়, গুটকা, পানমশলা এবং মাঝারি ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মোটরবাইক। সরকারের মতে, এই ধরনের দ্রব্য সাধারণ মানুষের জীবনে অপরিহার্য নয় বরং স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে বা বিলাসের অন্তর্গত। তাই সেগুলির ওপর উচ্চ হারে কর বসানো হয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে বহু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এবং জীবনদায়ী ওষুধের ওপর কর কমানো হয়েছে। সরকারি সূত্রে খবর, নতুন ব্যবস্থায় ৩৩টি জীবনদায়ী ওষুধ, যার মধ্যে ক্যানসারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রয়েছে, ছাড়াও মোট ১৭৫টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমবে। ফলে চিকিৎসা এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ অনেক খানি কমবে বলে দাবি করেছে কেন্দ্র।
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিমা খাতে এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের জন্য বড় স্বস্তির বার্তা। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে জীবনবিমা ও স্বাস্থ্যবিমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতদিন প্রিমিয়ামের উপরে জিএসটি থাকায় খরচ অনেকটাই বেড়ে যেত। বিমার উপর থেকে কর প্রত্যাহার হওয়ায় এখন সাধারণ মানুষ অনেক সহজেই বিমার সুবিধা নিতে পারবেন। ফলে বিমা খাতের প্রসারও আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
জীবনবিমার উপর থেকে জিএসটি প্রত্যাহারের দাবিতে বছরখানেক আগেই সরব হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেছিলেন, স্বাস্থ্য ও জীবনবিমার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের উপর কর বসানো সাধারণ মানুষের উপর অযথা চাপ সৃষ্টি করছে। তাই অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করা উচিত। অবশেষে সেই দাবিকেই বাস্তবায়িত করল কেন্দ্র। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, উৎসবের মরসুমে সাধারণ মানুষের খরচ কমিয়ে দিতে কেন্দ্র এই পদক্ষেপ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতাতেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, দেশের নাগরিকদের জন্য নতুন প্রজন্মের জিএসটি ব্যবস্থা উপহার দেওয়া হবে দীপাবলির আগেই। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে শুরু হয়েছে জিএসটি কাঠামোয় সংস্কারের কাজ। দিল্লিতে চলা কাউন্সিল বৈঠকে প্রথম দিনের পরেই ঘোষণা করা হল এই সিদ্ধান্ত। ফলে কর কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে দেশ।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেবে, তেমনি বিমা শিল্পের বাজারও আরও প্রসারিত হবে। নিত্যপণ্যের দাম কমার ফলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অন্যদিকে ‘পাপের সামগ্রী’ তালিকার দ্রব্যগুলিতে উচ্চ কর বসানোর ফলে সরকারও বাড়তি রাজস্ব পাবে।
সব মিলিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন জিএসটি কাঠামো আমজনতাকে একটু হলেও স্বস্তি দেবে বলে আশা করা যায়। একইসঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্যের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেও মমতার দাবির প্রতি সরকারের এই সাড়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিব মহল।
এক নজরে নতুন জিএসটি কাঠামো সংস্করণ:
৪০% কর ধার্য করা হয়েছে নিচের সামগ্রীতে ।
• বিলাসবহুল গাড়ি
• তামাকজাত দ্রব্য
• নরম পানীয়
• গুটকা ও পানমশলা
• উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মোটরবাইক
জীবনদায়ী ওষুধ ও নিত্যপণ্যে কর হ্রাস
• ৩৩টি জীবনদায়ী ওষুধ (যার মধ্যে ক্যানসারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ)
• ১৭৫টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমবে ফলে চিকিৎসা ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচে উল্লেখযোগ্য স্বস্তি মিলবে।
বিমা খাতে বড় স্বস্তি, জীবনবিমা ও স্বাস্থ্যবিমার উপর থেকে জিএসটি প্রত্যাহার:
• মধ্যবিত্ত ও প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বড় সুবিধা
• বিমার প্রিমিয়াম কমবে
• বিমা খাতের প্রসার ঘটবে
অর্থনৈতিক প্রভাব
• সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তি
• বিমা শিল্পের প্রসার
• নিত্যপণ্যের দাম কমায় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক প্রভাব
• ‘বিলাসিতা ও নেশা জাতীয় দ্রব্য সামগ্রীতে উচ্চ করে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি ।














