
৪ঠা অক্টোবর, ২০২৫। মহেশতলার বাটানগর ফ্যাক্টরি মূলগেটে এদিনের দৃশ্য যেন এক উৎসবের মহাসমুদ্র। বাংলার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো এক অনন্য দুর্গাপূজা কার্নিভাল, যা উপস্থিত হাজারো মানুষের মনে জায়গা করে নিল এক অবিস্মরণীয় স্মৃতি হিসেবে। ‘ডায়মন্ড মডেল’ নামে পরিচিত এই উদ্যোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অপূর্ব সমন্বয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা। পাশাপাশি বজবজ, মহেশতলা ও নোয়াখালীসহ ডায়মন্ড হারবার মহকুমার বিভিন্ন থানার বিধায়করা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলেন। পরিবহন মন্ত্রী দিলীপ মন্ডলও এই রঙিন শোভাযাত্রায় যোগ দিয়ে পূজো উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করেন। স্থানীয় কাউন্সিলরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি প্রমাণ করে—এটি শুধুমাত্র এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, বরং প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মিলিত উৎসবমুখরতা।
কার্নিভালে অংশ নেয় মোট ১৭টি ক্লাব, যারা নিজ নিজ থিম ভিত্তিক শোভাযাত্রা, বিভিন্ন লোকসংস্কৃতি, ঢাকের তালে তালে ঐতিহ্যবাহী দলের নাচ এবং বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জার মাধ্যমে রাস্তাজুড়ে তৈরি করে এক মায়াবী আবহ। কেউ ফুটিয়ে তুলেছে গ্রামীণ বাংলার চিরাচরিত লোকশিল্প, কেউ আবার তুলে ধরেছে নারীশক্তি বা পরিবেশ রক্ষার বার্তা। নানা রঙের আলপনা আঁকা রথ, দেবদেবীর মূর্তিমালা, ঢোল-কাঁসর, ধুনুচি নৃত্য আর আবেগঘন ধ্বনিতে মুখর ছিল গোটা এলাকা।
দর্শকদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। ছোট থেকে বয়স্ক—সবাই একত্রে দাঁড়িয়েছিলেন পথের দু’ধারে, মুঠোফোনে বন্দি করছিলেন একের পর এক মনোমুগ্ধকর মুহূর্ত। অনেকেই জানান, কলকাতার রেড রোডের কার্নিভালের মতোই এই আয়োজনও সেই মানের। বরং স্থানীয় পর্যায়ে এত সুন্দরভাবে আয়োজন হওয়ায় মানুষের অংশগ্রহণ অনেক বেশি দেখা গেছে।
মুখ্যমন্ত্রী যদিও এদিন সরাসরি উপস্থিত থাকতে পারেননি, তবুও তাঁর এই উদ্যোগের প্রতি সবার কৃতজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মানুষজন। তাঁদের মতে—“মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের গ্রামাঞ্চল, মহকুমা ও ছোট শহরগুলোর পূজা-সংস্কৃতিকে যে মঞ্চ দিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। আগে শুধুমাত্র রাজধানীকেন্দ্রিক উৎসব দেখতাম, এখন আমাদের এলাকাতেও সেই মর্যাদা মিলছে।
পরিবহন মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে জানান, “এই ধরনের কার্নিভাল শুধুমাত্র বিনোদন নয়, এলাকার উন্নয়ন ও পর্যটনকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আগামী বছর আরও বৃহত্তর পরিসরে এই অনুষ্ঠান করা হবে।”
সব মিলিয়ে, মহেশতলার দুর্গাপূজা কার্নিভাল শুধু এক দিনের উৎসব নয়, বরং সামাজিক ঐক্য, সাংস্কৃতিক শক্তি ও প্রশাসনিক সদিচ্ছার এক উজ্জ্বল নজির। উপস্থিত প্রত্যেকেই একবাক্যে বলেছেন—এমন আয়োজন বারবার হোক, বাংলার সংস্কৃতি আরও উচ্চতায় উঠুক।














