
আসুন আগে জেনে নেওয়া যাক E-20 পেট্রোল আসলে কি ?
- এথেনল কি? এথেনল ব্লেনডেড পেট্রোল কবে থেকে ব্যবহার করা হয়?
এথেনল আসলে এক ধরনের অ্যালকোহল। যা আসলে আঁখ ও ভুট্টা জাতীয় কৃষিজাত পণ্য দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। যাকে পেট্রোলের সাথে মিশিয়ে গাড়ির ইন্ধনের জননীয় ব্যাবহার করা হয়।
আমাদের দেশে এথেনল মিশ্রিত পেট্রোলের শুরু টা ২০১৪ সালে শুরু হয়।তখন এই এথেনল মিশ্রণের মাত্রা মাত্র ১.৫% ছিল। জুন ২০২২ সেই মাত্রা বেড়ে দাড়ায় ১০%। এর পর লক্ষ্য নির্ধারন করা হয় ২০৩০ সালের মধ্যে এই মাত্রা বাড়িয়ে ২০% করার। যা নির্ধারিত সময়ের ৫ বছর আগেই পূর্ণ করে নেওয়া হয়।
- গাইডলাইন:
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ২০২৩ সালে BS6-II যানবাহন নির্গমন মান ব্যবস্থা (vehicle emission standards system)লগু করা হয়। যার ফলে গাড়ি নির্মাতাদের গাড়ির ইঞ্জিন ও যাবতীয় যন্ত্রাংশ কে E-20 ইন্ধনের অনুকূল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
- সুবিধা :
১. কাঁচা তেলের ওপর নির্ভরতা কমবে
২. কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমবে
৩ আঁখ চাষীদের আয় বাড়বে
- সমস্যা:
১ মাইলেজে ঘটতি
২ ফুয়েল লাইন জ্যাম
৩ ফুয়েল ট্যাঙ্ক ও ইঞ্জিনে জং ধরা
৪ রবারের পার্টস নষ্ট হওয়া
৫ ইঞ্জিনের পারফরমেন্স ( performance) কমে যাওয়া
৬ ঠান্ডা অবস্থায় গাড়ি স্টার্ট করে সমস্যা হতে পারে
৭ পিক আপ তোলার সময় সমস্যা হতে পারে
৮ হঠাৎ ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার সমস্যা হতে পারে
৯ ওয়ারেন্টি এবং বীমা বাতিল (Warranty and Insurance void)
- কি করণীয় :
১. প্রতি ৫ লিটার পেট্রোলের সাথে ২০ মিলিলিটার ভালো fuel additive ব্যাবহার করুন
২. বাইক বা ২ হুইলারের ক্ষেত্রে সার্ভিস করার ব্যবধান কমিয়ে আনতে হবে। যেসব বাইক ৩০০০ কিলোমিটারে সার্ভিস করাতে হয় সেগুলো কে ২৫০০ ও যেসব বাইক ৫০০০ কিলোমিটারে এ সার্ভিস করতে হয় সেটাকে ৪০০০ কিলোমিটারে কমিয়ে আনতে হবে।
৩. স্পার্ক প্লাগ যা সাধারনত ৮ থেকে ১০০০০ কিলোমিটারে পরিবর্তন করা হয় সেটা কে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং প্রতি সার্ভিসে সেটাকে ঠিক মত ক্লিনিং করতে হবে
৪. যাদের কারবুরেটের আছে তারা সেটাকে নিয়মিত ক্লিনিং করাবেন
৫. যাদের এফ আই সিস্টেম আছে তারা এফ আই ইনজেক্টর নিয়মিত ক্লিনিং করাবেন। এফ আই সিস্টেম যুক্ত গাড়িগুলির পেট্রোল ট্যঙ্কে যে ফিল্টারটি আছে সেটকেও নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে এবং ক্লিনিং করাতে হবে।
৬. যারা গাড়ি নিয়মিত চালান না তারা গাড়ি তেল ভরা অবস্থায় ১০-১৫ দিনের বেশি ফেলে রাখবেন না।কারণ এথেনল প্রচুর পরিমাণে আদ্রতা শোষণ করে তাই বেশি সময় সেটা ট্যঙ্কে বেশি সময় ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকলে তা থেকে আদ্রতা বা জলীয় বাষ্প উত্পন্ন হবে এবং সেটা ট্যঙ্কে জলের পরিমাণ বাড়াতে সাহাজ্য করবে। যা ধীরে ধীরে তেলের সাথে মিশে আপনার গাড়ির ইঞ্জিন, কারবুরেটর /এফ আই সিস্টেম, ফুয়েল পাইপ ও গ্যাসকেট কে খারাপ করতে সক্ষম এবং ট্যঙ্কে জং পড়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।
৭. উপরোক্ত কারণেই (পয়েন্ট ৫)গাড়ির ট্যাঙ্ক অর্ধেকের বেশি ভর্তি রাখতে হবে। কারণ ট্যাঙ্ক যত বেশই কলহলি থাকবে তাতে জলীয় বাষ্পয়ের পরিমাণ ততটাই বেশি বেড়ে যাবে।
৮. পুরানো গাড়ির ক্ষেত্রে একটু প্রিমিয়াম কোয়ালিটির তেল (পারলে কোকো পেট্রোল পাম্প থেকে) ভরার চেষ্টা করুন। কারণ প্রিমিয়াম কোয়ালিটির তেলে অকটেনের মাত্রা বেশি থাকে
৯. যাদের কারবুরেটর ও BS6 ফেস ওয়ানের মাঝের গাড়ি আছে তারা অতি অবশই গাড়ি নির্মাতার অনুমোদিত (authorized)সার্ভিস সেন্টারে যান এবং গাড়ির গ্যাসকেট, সমস্ত রাবার পাইপ ও অইল শীল গুলো কে পরিবর্তন করে E-20 ইন্ধনের অনুকূল গ্যাসকেট, সমস্ত রাবার পাইপ ও অইল শীল ব্যাবহার করুন
১০. বর্তমানে প্রায় সমস্ত গাড়িতেই ECU আছে। এই ECU নিয়মিত গাড়ি নির্মাতার অনুমোদিত (authorized)সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে মপিঙ্গ করাতে হবে। কারণ যদি এটি বিকল হয় পড়ে তাহলে খরচের পরিমাণ অনেকটাই বেশি হয়ে যেতে পারে।
- বিশেষজ্ঞ দের মতামত:
পুদুচেরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ও ২ হুইলার গাড়ির এক্সপার্ট ডক্টর কুমারণ বলছেন পেট্রোলের ওপর বেশ করে যে সমস্ত গাড়ির ডিজাইন করা হয়েছে সেসব গাড়ির ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ এমন কোনো ইন্ধনে ঠিক মত কাজ করতে পারে না যেই ইন্ধনে বেশি পরিমাণে এথেনল মেশানো হয়। তাই পুরানো গাড়িগুলি কে এথেনল ব্লেন্ড পেট্রোলের অনুকূল করে তোলার জন্য গাড়ির পেট্রোল ট্যাঙ্ক, গ্যাসকেট, ফুয়েল পাইপ ইত্যাদি পাল্টে ফেলা অনিবার্য।
ইন্ধন এক্সপার্ট নরেন্দ্র তনেজা এব্যাপারে আরও বলেন পেট্রোলের তুলনায় এথেনলে শক্তি কম হয় তাই পুরানো গাড়িতে এথেনল ব্লেন্ড পেট্রোলের ব্যবহারের ফলে মাইলেজ কম হবে। তবে গাড়ির ইঞ্জিনের কিছু অংশ ও যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করে ও ঠিক মত টিউনিং করে পুরানো গাড়ি গুলিকেও E-20 পেট্রোলের অনুকূল করে তোলা সম্ভব।
উপরোক্ত সম্পূর্ণ লেখা টা যত টা সংক্ষেপে সম্ভব E-20 ইন্ধনের সমস্ত দিক গুলো ধরে তোলার একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস


















